Select Page

নিজামুদ্দিন আউলিয়া রহমাতুল্লাহর জন্ম ও পরিচয় : মাহবুবে ইলাহী হযরত খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়া রহমাতুল্লাহ হিজরী ৬৩৬ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং হিজরী ৭২৫ সালে ইহ-ধাম ত্যাগ করেন। ঈসায়ী সালের হিসাব মতে তার জন্ম হয়েছিল ১২১৫ খ্রিস্টাব্দে এবং তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন ১৩০৪ খ্রিস্টাব্দে। হিসেব করলে দেখা যায় যে, তিনি ৮৯ বছর এই জগতের ধুলায় অবস্থান করেছিলেন। এই ৮৯ বছরে তিনি রূহানী জগতে যে নবতর প্রাণ বন্যার জোয়ার এনেছিলেন এবং ধর্মসম্মত কার্যাবলী ও ঈমানের হেফাজতের লক্ষ্যে কাজ করেছিলেন, তা শুধু ভারতীয় উপমহাদেশে নয় বরং মুসলিম দুনিয়ার সর্বত্র নতুন অনুরাগের পথ রচনা করতে পেরেছিলেন। | খােদা প্রেমিক ও আশেকানে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর প্রতি তিনি এতই অনুরক্ত হয়েছিলেন যে, তিনি দিবারাত্রি আল্লাহ রাসূলের ধ্যানে মগ্ন থাকতেন এমন কি দ্বীন ও ইসলামের ব্যাপারেও জীবন উৎসর্গীকৃত করতে বিন্দুমাত্র অবহেলা করতেন না।

হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া রহমাতুল্লাহ যে একজন নির্বাচিত জীবন সন্ধানীই ছিলেন তা নয়, তিনি এবাদত বন্দেগীর দ্বারা আল্লাহ রাবুল আলামীনের নৈকট্যও লাভ করতে সক্ষম হয়ে ছিলেন। শুধু তাই নয় তিনি জনসেবা ও ঐশী প্রেমর ক্ষেত্রে তৎকালীন জগতে ছিলেন এক বিশিষ্ট মর্যাদার অধিকারী। জাতি ধর্ম-গোত্র-নির্বিশেষে তিনি অগণিত মানুষের সেবায় অহরহ ব্যাপৃত থাকতেন। সুতরাং ভারতবাসীদের ইতিহাসে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত রয়েছে।

শিক্ষা গ্রহণঃ জনক জননী ও আত্মীয় স্বজনদের আদর স্নেহে প্রতিপালিত হতে লাগলেন তিনি। ছেলেবেলাই কিশাের নিজামুদ্দিন অন্য ছেলে পিলেদের চেয়ে একটু অন্য ধরণের বলে মনে হতে লাগল। শৈশব থেকে তার মন মানসিকতা থেকে পিতামাতা বুঝতে পেরেছিলেন এই ছেলে একদিন জগতের পুজনীয় ব্যক্তিরূপে পরিগণিত হবে। তিনি ছােটকাল থেকেই তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছিলেন। তাঁর পিতা হযরত সাইয়্যেদ আহমদ রহমাতুল্লাহ দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে যখন চীর বিদায় নিলেন তখন নিজামুদ্দিন আউলিয়া-এর ৫ বৎসর বয়স।

তিনি পিতৃহারা বালক রূপে জীবন যাপন করিতে লাগলেন। মাতা জোলায়খা বিবি একটা সমস্যার মধ্যে পড়ে গেলেন। ঘর সংসারের কাজকর্ম সমাধা করা এবং প্রিয়পুত্রের লেখাপড়া নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লেন। যেভাবেই হউক তিনি পুত্রের এলমে দ্বীন শিক্ষা দিবেনই। তিনি ছেলেকে প্রাথমিক মক্তবে ভর্তি করে দিলেন।হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া রহমাতুল্লাহ সর্ব প্রথমে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করলেন এবং হযরত মাওলানা আলাউদ্দিন উমুলীর নিকট ফিকাহ শাস্ত্রের প্রাথমিক কিতাবসমূহ অধ্যয়ন করেন। একই সাথে মক্তবের পাঠ্যক্রম অনুযায়ী আনুষাঙ্গিক অন্যান্য বিষয়সমূহের জ্ঞান অর্জন করেন।

নিজামুদ্দিন আউলিয়া

মুগল রাজকুমারী জাহানারা বেগমের সমাধি (বামে), নিজামুদ্দিনের মাজার(ডানে) এবংজামা’য়াত খানা মসজিদ কমপ্লেক্স।

মক্তবের লেখাপড়া সমাপ্তি করার পর মায়ের আদেশানুসারে তাকে পাঠানাে হল প্রখ্যাত কামিল ও শিক্ষাবিদ হযরত মাওলানা শামসুদ্দিন দামাগানী রহমাতুল্লাহ-এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করার জন্য। প্রথম দর্শনেই মাওলানা শামসুদ্দীন রহমাতুল্লাহ সাহেব তার প্রতি কেমন যেন অনুপম ও আকর্ষণ অনুভব করলেন। তিনি প্রথম দেখাতে বুঝতে পারলেন যে উক্ত ছেলেটির মধ্যে বিরাট প্রতিভা লুকায়িত আছে। তিনি সানন্দে নিজাম উদ্দিনকে শিক্ষা দিয়ে মানুষ করলেন। তখন ছিল প্রাচীনকাল। আর সেই সময়টায় ছিল দিল্লীর অধিস্বর সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন। তিনি মাওলানা শামসুদ্দিন দামগানী এর তার পাণ্ডিত্য, কামালিয়াত ও বুযুর্গীর প্রতি খুবই শ্রদ্ধাবান ছিলেন। তিনি তাঁর পাণ্ডিত্যের ন্যায্য মূল্য স্বরূপ তাঁকে ‘শামসুল মূলক’ উপাধিতে বিভূষিত করেছিলেন। ধর্মীয় শাস্ত্র ফিকাহ, উমমূল আকায়েদ, সাহিত্য ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করার পর হযরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া রহমাতুল্লাহ হাদীস শরীফে উচ্চতর শিক্ষা লাভের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন এবং তৎকালীন দিল্লীর সর্বশ্রেষ্ঠ বুজুর্গ ও হাদিস বিমারদ হযরত মাওলানা কামালউদ্দিন রহমাতুল্লাহ-এর খেদমতে হাজির হন এবং তাঁর সাহচর্যে হাদিস বিষয়ক কিতাবাদি অধ্যয়নে ব্রতী হন ও সুখ্যাতির সাথে জ্ঞানার্জন করেন। তখন হাদীস বিশারদ মাওলানা আহমদ তাবারিজির স্থানও ছিল অতি উচ্চে। তাঁর চেয়েও তিনি অধিক জ্ঞানী বলে সমধিক প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন।

শুধুমাত্র হাদীস শরীফেই তার শিক্ষা সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি একাধারে যেমনি একজন সুপণ্ডিত ও শাস্ত্রকার ছিলেন তেমনি জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত শাস্ত্র, তফসীর, বালাগত, উমূল, ফিকাহ, আকায়েদ, ইতিহাস ও সাহিত্য সম্পর্কেও বিভিন্ন মাশায়েখদের নিকট হতে প্রভুত জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। একই সাথে তার তীক্ষ্ণ ধ্যান শক্তি তাকে প্রতুৎপন্নমতি, অসাধারণ ধৈর্য ও সহনশীলতা মনজিলে মকসুদে পৌছে দিল। তাঁর মধ্যে কোনরূপ আড়ম্বর প্রিয়তা ছিল না। সবসময়ই তিনি সহজ সরল জীবন যাপন করতেন। তার পাণ্ডিত্য সকলকেই বিমুগ্ধ করে তুলেছিল।

তরিকতে বিশেষ বুৎপত্তি লাভ ? মহান খােদা প্রিয় বান্দা মাহবুবে ইলাহী হযরত নিজাম উদ্দিন আউলিয়া রহমাতুল্লাহ এলমে জাহেরের সাথে সাথে এলমে বাতেনের প্রতিও আকৃষ্ট হয়ে পড়ে ছিলেন। তিনি মনে করেছিলেন, কিতাবী জ্ঞান কেমন যেন অপূর্ণ রয়ে গেল। জাহেরী ভাবে ধর্ম পুরােপুরি লাভ হয় না। তাই একমাত্র বাতেনের মাধ্যমেই কিছু আধ্যাত্ম সাধনায় গভীর মনােযোগের সাথে আত্মনিয়ােগ করেন।

তিনি ভাবতেন কিভাবে এলমে বাতেনের পরিপূর্ণতা লাভ করা যায়, তজ্জন্য তিনি তৎকালী বাতেনের শিক্ষা লাভ করার জন্য শায়খ নাজিমউদ্দিন মুতাওয়াকিল রহমাতুল্লাহ দিল্লীর বিখ্যাত তাশতদার মসজিদের হুজরাখানায় অবস্থান করতেন। তিনি ছিলেন তদাস্তীন সর্বশ্রেষ্ঠ অলিয়ে কামেল হযরত বাবা ফরিদ উদ্দি গঞ্জেশকর রহমাতুল্লাহ-এর ছােট ভাই। তরিকতের ক্ষেত্রে তিনি গঞ্জেশকর রহমাতুল্লহ-এর পথই অনুসরণ করে চলতেন। | অয্যোধ্যার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে তিনি হিজরী ৬৫৫ সালের ১০ই রজব তিনি শায়খ ফরিদ উদ্দীন গঞ্জেশকর রহমাতুল্লাহ খানকায় উপস্থিত হন। তাঁর খানকা শরীফ ছিল অয্যোধ্যায় । নিজামুদ্দিন আউলিয়া রহমাতুল্লাহ হযরত শায়খ ফরিদ গঞ্জেশকর রহমাতুল্লাহ-কে পরম শ্রদ্ধাভরে কদমবুসি করলেন। প্রথম পর্বেই যেন সােনার সােহাগার মিলন ঘটল। গঞ্জেশকর রহমাতুল্লাহ-এর যা কিছু দেবার ছিল, এর সবই মাহবুবে ইলাহী রহমাতুল্লাহ কে দান করলেন। তিনি স্বীয় চারতফি টুপী পরিয়ে দিলেন। স্বীয় খড়ম জোড়া ও খেরকাত তাকে দান করলেন।

উক্ত যে সমস্ত চাৱতফিওয়ালা টুপি খড়ম তাঁর ছিল, ঐগুলাে যে তার কাছে অমূল্য রতন রূপে মনে হলাে, তার পর তিনি বললেন, আল্লাহর যে নেয়ামত আমার কাছে ছিল তা কাউকে দান করার কথা আমি ভাবছিলাম। পরক্ষণেই তিনি ভাবছিলেন হিন্দুস্থানের বেলায়েত কাকে দেয়া যায়, এ নিয়েও চিন্তা ভাবনার অন্ত ছিল না। এমন সময় গায়েৰী আওয়াজের মাধ্যমে তাকে জানানাে হল ধৈয্য ধর, নিজামউদ্দিন আসছে, হিন্দুস্থানের বেলায়েত তাকেই দান কর। এই রূপ ভাবেই হযরত নিজামুদ্দিন তার ওস্তাদের কাছ থেকে এলমে মারেফাতের, বেলায়েত লাভ করে ইসলাম প্রচার ও প্রসারের কাজে নিজেকে মনােনিবেশ করিলেন।

মুর্শিদের দরবারে গিয়ে আধ্যাত্মিকতা শিক্ষা নিলেনঃ মুর্শিদের দরবারে তিনি মারেফাতের কামিলিয়্যাত হাসিলের বিশেষ সুযােগ পেয়েছিলেন। তিনি যে দরবারে উপস্থিত হয়েছিলেন তা ছিল সেকালের বিখ্যাত দরবার শরীফ। যার কথা পূর্বেই বর্ণনা করেছি। যে হযরত শায়খ ফরিদ উদ্দিন গঞ্জেশকর রহমাতুল্লাহ-এর দরবারে সদা সর্বদাই বিখ্যাত সাধক ও আউলিয়াদের পদাচারণে অলংকৃত ছিল এবং তাদের সকলেই সাধ্যত পবিত্র দরবারের কাজে থাকতেন, আর দরবারের কাজেই তারা নিজেদের আধ্যাত্মিক উন্নতির মূল প্রেরণ বলে মনে করতেন। সেখানে অত্যন্ত দীনহীন বেশে সামান্য পানাহার গ্রহণ করে তারা এলমে মারেফাতের তালীম ও তরবিয়তি দ্বিধাহীন চিত্তে গ্রহণ করতেন এবং আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পবিত্র মুহব্বত লাভের দিকে ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতেন, মারেফাত আয়ত্ব করার জন্যে।

কথিত আছে যে, হযরত গঞ্জেশকর রহমাতুল্লহ-এর মুরীদগণের মাঝে বেশি সংবেদন ছিলেন মাহবুবে ইলাহী রহমাতুল্লাহ । একদিনের ঘটনা। তার সেদিন বাজার করার কথা, এমনকি নিজের কাছেও পয়সা ছিল না, হযরত নিজামউদ্দীন ভাবলেন সামান্য লবণ বা লবণ ছাড়া কোন ক্রমেই খাওয়া যাবে না। সেই জন্য তিনি অপর এক পীর ভাইয়ের কাছ হতে কিছু পয়সা ধার গ্রহণ করে লবণ খরিদ করে তরকারী পাক করে, হযরত গঙ্গেশকর রহমাতুল্লাহ-এর সামনে পরিবেশন করলেন।

উক্ত ঘটনা কিন্তু পীর সাহেবের অগােচরে সংঘটিত হয়েছিল। যখন খাদ্য পরিবেশনের সময় হল, তিনি পীর কেবলা হযরত গঞ্জেশকর এর সামনে খাদ্য পরিবেশন করা মাত্রই তিনি বলে উঠলেন, আহাৰ্য্য বস্তু প্রত্যক্ষ করে আমি জানতে পারলাম যে উক্ত আহাৰ্য্য বস্তুতে অপচয়ের গন্ধ মিশে আছে। এই তরকারীতে ব্যবহৃত লবণ কোথা হতে সংগ্রহ করা হয়েছে?

মাহবুবে খােদা হযরত নিজামউদ্দীন রহমাতুল্লাহ বিপাক পড়ে গেলেন, তিনি বিনীত ভাবে বললেন হুজুর লঙ্গর থানায় লবণ ছিল না। এমনকি আমার কাছেও কোন পয়সা। কড়ি ছিল না, ঋণ গ্রহণ করে সামান্য লবণ কিনে তরকারী পাক করলে হযরত আপনি তরকারী খেতে পারবেন এই মনে করে লবণ কিনেছি, হুজুর বললেন, ঋণ করা তরকারী কিছুতেই খাওয়া যাবে না। বরং এর চেয়ে মৃত্যুবরণ করাই শ্রেয়। তিনি বললেন, এ তরকারী সবগুলাে গরীব মিসকিনদের মধ্যে দান করে দাও।

মাহবুবে খােদা হযরত নিজামুদ্দিন রহমাতুল্লাহ তৎক্ষণাৎ উক্ত তরকারীগুলাে ফকির মিসকিনদের মধ্যে বিতরণ করে দিলেন। তিনি জীবনে এরূপ কাজ আর করবেন না বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেন। এবং আল্লাহর দরবারে তওবা করে মুনাজাত করলেন। এই তওবার কথা শুনে পীর, কেবলা খুশী হয়ে স্বীয় আসনের কম্বল খানি হযরত মাহবুবে ইলাহী রহমাতুল্লাহ কে দান করলেন।

হিজরী ৬৫৫ সালের ১০ই রজব হতে পরবর্তী সালের ২রা রবিউল আউয়াল পর্যন্ত তিনি তালিম, তারবিয়াত ও তাওয়াজ্জ্বত গ্রহণ করে ছিলেন। ১০ই রজব হতে পরবর্তী সালের ২রা রবিউল আউয়াল পর্যন্ত একটি বছর পর্যন্ত হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া রহমাতুল্লাহ স্বীয় পীর ও মাের্শদে কামেল হযরত শায়িখ ফরিদ উদ্দীন গঞ্জেশকর রহমাতুল্লাহ এর দরবারে অতিবাহিত করেছিলেন। ঐ সময়ে তিনি রিয়াজত ও মােজাহাদার মাধ্যমে উত্তরােত্তর উন্নত স্তরে সমুন্নতু হয়েছিলেন।

ওয়াদা পালনে তিনি ছিলেন আদর্শের মূর্ত প্রতীক ও মহান রাব্বল আলামীনের অলীগণ কৃত অঙ্গিকারের প্রতি সর্বদাই ছিলেন সতর্ক। কারণ তারা এ জগতকে উপেক্ষার দৃষ্টিতে দেখেন এবং এ জগতকেই একমাত্র মুক্তির পথ বলে স্বীকার করেন না। এ জগতকে তারা সাধারণ জীবনে অর্থাৎ জীৰ আত্মার আবাস স্থান হিসেবে মনে করেন, কিন্তু সাধক জীবন আরম্ভ হবে মৃত্যুর পরে এ বিশ্বাসে তারা বিশ্বাসী। কাজেই প্রথমতঃ ব্যক্তি কেন্দ্রিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। এখানে বলা হয়েছে জীবনকে দুই ভাগে ভাগ করার কথা। প্রথম ভাগ বলতে ব্যক্তি কেন্দ্রিক দায়িত্ব কুর্তব্য। এবং দ্বিতীয়তঃ সমষ্টিগত বা সামগ্রিক দায়িত্ব। ওয়াদা পালন ব্যক্তি দায়িত্ববান ও সমষ্টি উভয় ক্ষেত্রেই সমভাবে প্রযােজ্য। ওয়াদার বরখেলাপ, জীবনে যেমন নানা রকম অসুবিধা দেখা দেয়। তেমনি সমষ্টিগত সমাজ ও জাতীয় জীবন এর ক্ষতিকর প্রভাব কোন অংশেই কম হয় না। সুতরাং এর পরিপ্রেক্ষিতে আল কুরআনে ও সহী হাদিসে ওয়াদা পালনের প্রতি জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। এমন কি ওয়াদা ভঙ্গ করার কুফল সুস্পষ্ট ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি সর্বাগ্রে ওয়াদা পালনের পথ বেছে নিতেন অন্যথায় প্রয়ােজনবােধে অন্যান্য কাজকর্মে মনােনিবেশ করতেন।

নিজামুদ্দিন আউলিয়ার চিল্লা, নিজামুদ্দিন আউলিয়ার বাসস্থান, হুমায়ুন এর সমাধির উত্তর-পুর্ব দিকে

নিজামুদ্দিন আউলিয়ার চিল্লা, নিজামুদ্দিন আউলিয়ার বাসস্থান, হুমায়ুন এর সমাধির উত্তর-পুর্ব দিকে-দিল্লি

দিল্লীর সম্রাটদের অনেকেই মাহবুবে ইলাহী হযরত খাজা নিজামউদ্দীনের মুরিদ ছিলেন। সম্রাটের পুত্র শাহাজাদা খেজেরখাও হযরতনিজামুদ্দিন রহমাতুল্লাহ এর নিকট বয়াত গ্রহণ করেন। এ সকল আমীর শাহাজাদাদের সাথে মাহবুব ইলাহী রহমাতুল্লাহ যেমন ব্যবহার করতেন ঠিক তেমনি ব্যবহার, একজন গরীব দুঃখীর সাথেও তিনি করতেন। ধনী গরীব উচু নীচুর কোন প্রভেদ তার দরবারে ছিলাে না। | বিশ্ববিখ্যাত সম্রাট এ যুগবরেণ্য আউলিয়া, নিজামউদ্দীন আউলিয়ার খানকাহর জন্য পঞ্চাশ হাজার রৌপ্য মুদ্রা সুনির্দিষ্ট করেন এবং আমীর কাশেফ হাজের এর মাধ্যমে এ মহান আউলিয়ার নিকট প্রেরণ করলেন। আমীর কাশেফ হাজের উক্ত মুদ্রা নিয়ে হযরত নিজামউদ্দীন আউলিয়া রহমাতুল্লাহ এর সন্দিধানে উপস্থিত হলেন। কিন্তু হযরত নিজামউদ্দীন আউলিয়া রহমাতুল্লাহ পূর্বকৃত ওয়াদার কারনে আমীর কর্তৃক প্রদত্ত রৌপ্য মুদ্রার প্রতি মােটেও তাকালেন না। বরং পূর্ব ওয়াদা পালনের যাবতীয় উপক্রম তিনি গ্রহণ করলেন।

হযরত মাহবুবে ইলাহি রহমাতুল্লাহ বললেন, আমি পূর্বকৃত ওয়াদা সংক্রান্ত কাজে খুবই ব্যস্ত আছি এ সময় অন্য কিছুর প্রতি নজর দেয়া আমার পক্ষে মােটেই সম্ভব নয়। পঞ্চাশ হাজার রৌপ্য মুদ্রা অপেক্ষা ওয়াদা, পালনের মূল্য আমার নিকট বেশি আমি মনে করি, ওয়াদা পালন করা আটটি বেহেশত হতেও উত্তম। বাদশাহের আমীর প্রদত্ত টাকা নিয়ে ফিরে গেলেন এবং টাকা পয়সা ও অর্থ কড়ির প্রতি হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়ার রহমাতুল্লাহ এর বীতশ্রদ্ধ ভাবের ভূয়সী প্রশংসা করলেন। দিল্লীর সম্রাট এতে মােটেও বিরক্ত ভাব প্রকাশ করলেন না। বরং সহাস্য আনন্দে প্রেরিত রৌপ্য মুদ্রার তােড়া সযত্নে তুলে রাখলেন।

মাহবুবে খােদা হযরত নিজামুদ্দিন রহমাতুল্লাহ এর উপদেশাবলী :

(ক) অহংকার ধ্বংসের মূলঃ এ বিশ্ব জগতেযতগুলাে ধ্বংসকারী উপাদান আছে তন্মধ্যে অহংকার ও গর্ব সবচেয়ে ক্ষতিকর। তার কারণ স্বরূপ মহান রাব্বল আলামীন পবিত্র কোরআনে অহংকার বর্জনের জন্য বার বার তাকীদ করেছেন। আল-কুরাআনে ঘােষণা করা হয়েছে, “আল্লাহ পাক অহঙ্কারীকে পছন্দ করে না।” হাদীস শরীপে আছে , নবী করীম (সঃ) এরশাদ করেছেন, “অহংকার মানুষকে ধ্বংসের পথে পরিচালিত করে। কাজেই এ অহংকার ও গর্ব করা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে না পারলে কোন ব্যক্তি আধ্যত্ম সাধনায় যেমন উন্নতি লাভ করা যায় না তেমনি তার পতনও হয় অনিবার্য। আল্লাহপাকের আজাব এবং গজৰ অহংকারীর উপর অবশ্যই পতিত হয়ে থাকে। ফেরাউনের কাহিনী নমরূদ ও সাদ্দাদের কাহিনী এবং তাঁদের সমূলে বিনাশ হওয়ার যে কারণ লক্ষ্য করা যায় তা ছিল অহঙ্কার। | একান্ত ভাবেই মানুষের পক্ষে অহংকার ও অহমিকা নানা ভাৰে প্রকাশ পেতে পারে। ধন, জনবল, বাহুবল এবং বুদ্ধি চাতুরতার তীক্ষ্ণতা অধিকাংশ সময় মানুষকে অহংকারী করে তােলে। যাহা হউক, অহংকার এর ছোঁয়া’ হতে বেঁচে থাকা বড়ই দুঃসাধ্য ব্যাপার। | (খ) আল্লাহকে পাওয়া খুবই কঠিন, অথচ আবার একেবারেই সােজা । এখন বান্দা শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে দাস বা গােলাম। গােলামের উচিত স্বীয় মনিবের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও আনুগত্য প্রদর্শন করা এবং বিনিময়ের মাধ্যমে বান্দার প্রতি আল্লাহ পাকের অশেষ বরকত ও রহমতের ধারা বর্ষিত হতে থাকে। ফলে বিনয়ী বান্দাহ তার মহামানব আল্লাহ পাকের রহমত ও বরকত লাভে ধন্য হয়। রসূলে পাক (সঃ) বলেছিলেন, তােমরা বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন কর। কেননা, বিনয় এবং তার মাঝে পরিপূর্ণ সফলতা বিদ্যমান। দুনিয়ার জীবনে আমরা যে সকল লক্ষ্য উদ্দেশ্য সাধন করার জন্য মনস্থ করে থাকি এগুলাে যতখানি সহায়তা স্থান করতে পারে, তার চেয়ে সঠিক উপকারী সহায়ক উপাদান হল বিনয় ও নম্রতা। বিনয়ী লােকের কোন শত্রু থাকে না। কারণ তার সহজাত বিনয় শক্রতা সাধনের পথকে চিরতরে রুদ্ধ করে দেয়। সুতরাং ইহলৌকিক ও পরলৌকক যাবতীয় কর্মকান্ডে সফলতা অর্জন করতে হলে বিনয় ও নম্রতা দৃঢ়ভাবে ধারণ করা একান্ত দরকার।

(গ) অনিষ্টের মূল কারণ সমূহ হচ্ছে রিপুর তাড়নায় গর্হিত কাজের ভিত্তমূর রচনায় কাম, ক্রোধ, মােহ, লোেভ ও মাৎসর্য্যঃ এ বিশ্ব ভ্রামাণ্ডের মাঝে মানব দেহের যে সকল ইন্দ্রিয় রয়েছে তন্মধ্যে ছয়টি ইন্দ্রিয় খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে, ইন্দ্রিয়গুলাে হচ্ছেঃ (১) চোখের দৃষ্টি শক্তি (২) কানে শ্রবণ শক্তি (৩) নাকের ঘ্রাণ শক্তি (৪) জিহবার আস্বাদন শক্তি (৫) ত্বকের স্পর্শ শক্তি ও (৬) দেহের জৈবিক তাড়না শক্তি।

উপরােক্ত ছয়টি শক্তি হতে যে সকল কু-রিপু মানুষের মাঝে আত্ম প্রকাশ করে তা হলাে কাম, ক্রোধ, লোভ, মােহ, মৎস্য। এ রিপুগুলাে যখন কোনও মানুষের মাঝে শাখা প্রশাখা ও পত্রপল্লবে পরিব্যক্ত হয়ে উঠে, তখন তার স্বাভাবিক মানবীয় গুনাবলী লােপ পায় এবং সে ক্রমে ক্রমে পশু স্বভাৰ ধারণ করে। তজ্জন্য মানুষ রূপে জন্মগ্রহণ করেও সে আর মানবীয় সত্তারূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পার না। এ জন্য কাম, ক্রোধ, লােভ, মােহ, মদ এবং মাৎসর্য্যকে কঠোর সাধনার মাধ্যম অবদমিত করে তুলতে পায়। তা না হলে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দেয়া মােটেই বিচিত্র নয়। | এ আধুনিক ধরার বুকে মানুষ উছিলা স্বর রাজ্য ও রাজা কিংবা কোনও নেতার সংস্পর্শহীন ভাবে কোন ক্রমেই টিকে থাকতে পারে না। প্রতিটি মানুষের জন্য একটি আবাসভূমির দরকার এবং ভূখন্ডের শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার রক্ষার জন্য একজন সুদক্ষ রাজা ৰা প্রশাসক থাকা একান্ত অপরিহার্য। তা না হলে রাজ্যে বিশলা ও অশান্তি দেখা দেয়া স্বাভাবিক।

আধ্যাত্মিকতার ভাষায় রাজ্য বলতে এখানে বুঝায় দেহকে এবং মন হল তার রাজা বা শাসক। মনের কার্য প্রতিক্রিয়া অনুসারে দেহের যাবতীয় অঙ্গ প্রতঙ্গ পরিচালিত হয়। তাই দেহ রাজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মনকে কঠোর সাধনার বা সংযমের মাধ্যমে, শয়ন্ত্রণ করতে হবে। অতএব, মানুষের চিত্তবৃত্তিকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করার জন্য যে কঠোর প্ররিশ্রম ও সাধনার দরকার, তাকেই জেহাদে আকবার হিসেবে ধরে নেয়া হয়।

ইন্তেকালঃ- ঐতিহাসিকের মতে হিজরী সাতশ পঁচিশ সালের ১১ই রবিউল আওয়াল মাসে দিল্লীর আকাশে বাতাসে দেখা গিয়েছে কাল মেঘের ঘনঘটা। দীর্ঘ ৮৯ বছর দ্বীন ও ইসলামের খেদমতে অতিবাহিত করে খাজা মাহবুবে ইলাহী সুলতানুল আউলিয়া হযরত নিজামুদ্দিন রহমাতুল্লাহ মহান প্রভুর চূড়ান্ত সান্নিধ্যে উপস্থি হলেন। তার মৃতুল পর দিল্লী তথা মুসলিম জাহানের ভাগ্যকাশে নেমে এল মহাদুর্যোগ। | মাহবুবে এলাহি খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়া রহমাতুল্লাহ এর ইন্তেকালের পর অগণিত লােকের ঢল নেমে আসল গিয়াসপুরে। সকলের মাঝেই কেমন যেন এক শােকের ছায়া, বেদনার সুর। কি যেন ছিল কি যেন নাই, কেমন যেন এক শােকার্ত হাহাকারের দিল্লীর আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠল। দিল্লীর আনাচে কানাচে একই ক্রন্দন রােল। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইল্লাহি রাজিউন। * হযরত খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়া রহমাতুল্লাহ যতদিন এ পৃথিবীর বুকে জীবিত ছিলেন, ততদিন কেউ তার মর্যাদা, ফযিলত ও রূহানী জগতের অবস্থা সম্পর্কে পুরােপুরি এয়াকেবহাল ছিল না। তবে যারা তার সত্যিকারে মর্যাদা ও ফযিলত সম্পর্কে সচেতন ছিলেন, তাদের মােঝেই তার বিরােধ বেদনার সুর প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছিল। যে দিকেই তাকানাে যায়, সে দিকেই শুধু হাহাকারের বেদনার একান্ত বিলাপ। কবি প্রকৃতই বলেছিলেন, তােমার হৃদয়ে যে কি সুর ছিল । কাঁদিছে তাই মাের হিয়া, পাষাণ ভেদিয়া প্রবাহিত ধারা চির জনমের তরে ব্যথিত করিলে মােরে।

উপরােক্ত কবিতার ছন্দে অবশ্যই করুণ সুর এর আভাস পাওয়া যায়। সেই শােকের হায়া নেমে এসেছিল সারা দিল্লীর বুকে, জনমনে আজ আর কোন শান্তি নেই, আনন্দ নেই, নেই কোন সাচ্ছন্দ্য, তার তুলনা করা যায় না।

কোন কোন বর্ননায় জানা যায় হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া রহমাতুল্লাহ ৮৯ বছর বয়সে রবিউল আখের চান্দের আঠার তারিখে হিজরী ৭২৫ সালে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। মৃত্যু তারিখ সংক্রান্ত বর্ণনাগুলাে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ১১ তারিখ এবং ১৮ আরিখের মাঝে প্রভেদ পাওয়া যায় তবে যাই হােক, তিনি যে তারিখেই মৃত্যুবরণ করুন না কেন তার মহা প্রস্থানে সারা ভারতীয় উপমহাদেশে জাতি-ধর্ম-বর্ণ গােত্র নির্বিশেষে কলের মাঝেই যে শােকের ছায়া এবং বেদনার ধরা নেমে এসেছিল একথা বলার অবকাশ রাখে না। মাহবুব ইলাহি হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া রহমাতুল্লাহ এর মৃত্যুকষ্ট বা যাতনা প্রকাশ পাওয়ার পর দিল্লীর সুলতান তুঘলােক শাহ এবং বহু গুণগ্রাহী ব্যক্তি তার চিকিৎসার জন্য অধীর হয়ে উঠলেন। কিন্তু হযরত সুলতানুল আউলিয়া রহমাতুল্লাহ আর্থিব কোন চিকিৎসা কিংবা ওষুধের প্রতি মােটেই আগ্রহী ছিলেন না। তিনি সর্বদাই আল্লাহ পাকের জিকির এবং স্বরণে নিমগ্ন থাকতেন। জীবনের সকল অবস্থায় আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী এবং হুকুম আহকাম পালন করার জন্য তিনি তৎপর থাকতেন। পৃথিবীরকোন বস্তুর প্রতিই তার কোন আকর্ষণ ছিল না। এ জন্য সম্রাট কর্তৃক প্রেরিত রাজ হেকিম যখন তার নিকট চিকিৎসার জন্য উপস্থিত হল তখন তিনি বললেন, ভালবাসার ব্যথায় পীড়িত ব্যক্তির একমাত্র ওষুধ হলাে আশেকের দিদার লাভ করা। এ ছাড়া কোন কিছুই তাকে সান্তনা দিতে পারে না। একথা বলার পর রাজ হেকিম চলে গেলেন। এর কিছুক্ষণ পরই হযরত নিজামউদ্দীন আউলিয়া রহমাতুল্লাহ এর প্রাণ বায়ু দেহ পিঞ্জর ছেড়ে অমর ধামে প্রস্থান করল। * এই মৃত্যুর ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল। সম্রাট মােহাম্মদ তুঘলক এবং হযরত রুকুনুদ্দিন সােহরাওয়ার্দী গিয়াসপুরে ছুটে আসলেন। হযরত মাহবুবে এলাহি রহমাতুল্লাহ এর জীবদ্দশায় সম্রাট মােহাম্মদ তুঘলক কখনও তার দরবারে হাজির হওয়ার অনুমতি পান নাই। ফলে এ মহাপুরুষের মৃত্যুর পর তার অন্তিম ক্রিয়ার অংশগ্রহণ করতে সুযােগ লাভ করে নিজকে ধন্য মনে করেছিলেন। এবং তার চেহারা মােবারক এক নজর দেখে পরম স্বস্তি লাভ করেছিলেন। অসিয়ত অনুসারে তিনি তাকে যেন খানকায়ে সম্মুখে যে একটি বিরাট পুকুর বিদ্যমান ছিল সেই পুকুরের মাঝখানে যেন মৃত্যুর পরে দাফন করা হয়। ফলে ম্রাটের নির্দেশে অগণিত লােক পুকুর ভরাট করার কাজে যােগদান করল। অল্প সময়ের মধ্যেই সুচারু রূপে উক্ত পুকুরটি ভরাট হয়ে গেল এবং হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া রহমাতুল্লাহ এর অন্তিম জানাযা স্বয়ং ম্রাটসহ দিল্লীর এবং আশপাশের সকল শ্রেণীর নাগরিকগণ অংশগ্রহণ করে রূহে মাগফেরাত কামনা করে তাকে চির বিদায়ে সমাহিত করলেন।

মনসুর হাল্লাজ এর জীবনী পড়তে এখানে ক্লিক করুন।