আজ আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি গনতন্ত্র ও দেশপ্রেমী মানুষকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।
১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৭ সাল থেকে জাতিসংঘ সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে গণতন্ত্র সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি এবং গণতন্ত্র চর্চাকে উৎসাহিত করার জন্য একটি বিশেষ দিবস পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। তারপর থেকেই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের উদ্যোগে ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
এ দিবসটিতে জাতিসংঘ সদস্যভুক্ত সব রাষ্ট্রগুলিকে তাদের নিজ নিজ জনগণের মাঝে গণতন্ত্রের গুরুত্ব তাৎপর্য, মূলনীতি আদর্শ ও উপাদান, গনতান্ত্রিক সরকারের চর্চা ও আচরণ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া এবং গনতন্ত্র সম্প্রসারণে আন্তর্জাতিক সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরী, মূল্যবোধ কার্যকরকরণ ও সম্প্রসারণের আহবান জানানো হয়।
গণতন্ত্র এমন একটি শাসনব্যবস্থা, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের নীতিনির্ধারণ বা সরকারী প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সমান ভোট বা অধিকার রয়েছে।
মূলতঃ জনগণের মতামতই হয় সরকার পরিচালনার ভিত্তি। কেবলমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়ে উঠে। গণতন্ত্রে আইন প্রস্তাবনা, প্রণয়ন ও তৈরীর ক্ষেত্রে সব নাগরিকের সমান অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে, যা সরাসরি বা নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে হয়। প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাজ বা রাষ্ট্রে ব্যক্তি বা নাগরিকের অধিকার মর্যাদা সমুন্নত থাকে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় কখনো মানুষকে দাসে পরিণত করা যায় না। একমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বা সমাজেই কেবলমাত্র মানুষের ন্যায্য ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত যায়।
কিন্তু সারাবিশ্বে বহু গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার নামে সাধারণ জনগণের ইচ্ছা, আগ্রহ ও স্বাধীনতাকে ভূলুন্ঠিত করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করে চলেছে। এই দুঃশাসনের কালো ছায়ায় নিমজ্জিত হচ্ছে আমাদের আজকের বাংলাদেশ ও তার জনগণ। বর্তমান রাজনীতিতে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে গলাটিপে শ্বাসরুদ্ধর পরিস্থিতি ও সংকুচিত করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার, বাক ব্যক্তি স্বাধীনতা, মানবিক মর্যাদা ও গনতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বহুবিধ কালো আইনের মাধ্যমে গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে রুদ্ধ করা হয়েছে। দেশে একনায়কতান্ত্রিক দুঃশাসন প্রতিষ্ঠা ও পাকাপোক্ত করণের লক্ষ্যে ভিন্ন দল মতের মানুষকে মামলা হামলা, জুলুম অত্যাচার, গুম খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছে।
যেখানে জনগণ রাষ্ট্রের মালিক, জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস সেখানে জনগণের গনতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের পছন্দের জনপ্রতিনিধি বা সরকার গঠনের পদ্ধতি বাতিল করে গনতান্ত্রিক নির্বাচনব্যবস্থার পথকে রুদ্ধ বা ধ্বংস করা হয়েছে। পক্ষপাতদুষ্ট ও আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের নামে দেশের সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে প্রহসন, প্রতারণা ও তামাশা করা হয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে নির্বাচনের পূর্বে দিনের ভোট রাতে সম্পন্ন করে বিনা ভোটের একটি অবৈধ অগণতান্ত্রিক ভোট ডাকাত সরকার গঠন করা হয়েছে। অনৈতিক বা একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা দীর্ঘস্থায়ী করতে ফ্যাসিবাদী কায়দায় রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আইন আদালত ও বিচারব্যবস্থা তাদের আজ্ঞাবহ তাবেদার বা ফরমায়েসী গোলাম হয়ে কার্যসম্পাদন করছে, রায় বা বিচারকার্য পরিচালনা করছে। তাদের কোন স্বতন্ত্রবোধ, স্বাধীনতা বা ব্যক্তিত্ববোধ বলে কিছু নেই বললেই চলে। রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক আদালতে তার জামিন পাওয়ার গনতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে কিন্তু সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও অবিসংবাদিত নেতা, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বিভিন্ন সাংবাদিক বুদ্ধিজীবীসহ রাষ্ট্রের নাগরিক বৃন্দ। এভাবে প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট বা প্রতিষ্ঠানই পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ বেশ্যাবৃত্তিতে নির্লিপ্ত হয়ে নির্বোধ নির্লজ্জ ও চরিত্রহীন দাসত্বের জীবনযাপন করছে।
প্রশাসন ও আমলা কামলা নির্ভর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের এমন বিপর্যস্ত ক্রান্তিকাল থেকে উত্তরণের জন্য আজকের গনতন্ত্র দিবসে গনতন্ত্রের গুরুত্ব তাৎপর্য, মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও নীতি আদর্শ, সচেতনতাবোধ ও একটি গনতান্ত্রিক সরকারের আচরণ ও জনগণের গনতান্ত্রিক অধিকার সম্পর্কে সারাদেশের জনগণকে সচেতন করে তোলা খুবই জরুরী। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য যেকোন একটি সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে হবে। অন্যথায় এই একনায়কতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদ বা ভোট ডাকাত সরকারের অধীনে কখনও জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে না, অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না।
আজ জনগণের মৌলিক বা গনতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় গনআন্দোলনের বিকল্প নেই। যুগেযুগে রক্ত ও জীবনোৎসর্গের মধ্যদিয়েই জনগণের বিজয় অর্জিত হয়েছে। তাই আসুন ভুলুন্ঠিত গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় সারাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে গনআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ুন গনতন্ত্র দিবসে এই হউক আমাদের প্রতিজ্ঞা।
—
ধন্যবাদান্তে-
শারফিন চৌধুরী রিয়াজ।