Select Page

খাজা বাবার জীবনী, বানীঅলৌকিক ঘটনা এবং বিশেষ উপদেশাবলীঃ

খাজা বাবার জীবনীঃ হযরত খাজা গরীব-উন-নওয়াজ বুরহানুল আশেকীন, সেরাজুস সালেকীন, মুরাসিল মুশকিন, শামছিল আরেফীন, আতায়ে রসূল, সূলতানুল আওলিয়া, রৌশনজামীর, খাজায়ে খাজেগান, পীরে পীরান, কুতুবে রব্বানী, মাহবুকে সােবহানী, হযরত খাজা মঈনুখীন হাসান চিশতী সনজরী দুম্মা আজমেরী (রাঃ) হযরত রসূলে খােদা (সাঃ)-এর পৌত্র হযরত ইমাম হাসান (রাঃ)-এর বংশধর। হযরত খাজা গরীব-উন-নওয়াজের পিতার নাম হযরত সৈয়দ গিয়াসুদ্দীন হাসান সজী । সঞ্জরের অন্তর্গত সিস্তান নামক স্থানে হযরত খাজা বুজুর্গ জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব ও বাল্যকাল সিস্তানেই তিনি অতিবাহিত করেন। যখন তার বয়স ১৫ বছর তখন তার আব্বা পরলােক গমন করেন। মরহুম আব্বার রেখে যাওয়া সম্পত্তির অংশ যা তিনি পেলেন তার পরিমাণ ধনী হওয়ার জন্য কম ছিল না। ( মারেফত কি এবং মারেফত কাকে বলে )

একদিন খাজা ইব্রাহিম (রঃ) নামের এক মজ্জুব (আল্লার প্রেমে উদাস বুজুর্গ) ভার আঙ্গুর বাগানে প্রবেশ করলেন। হযরত খাজা গরীব-উন-নওয়াজ মজ্জুবের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর একগুচ্ছ তাজা আঙ্গুর তার খেদমতে পেশ করলেন। হযরত খাজা ইব্রাহিম অত্যন্ত সন্তুষ্ট চিত্তে আঙ্গুর ভক্ষণ করলেন এবং কুলির মধ্য থেকে কয়েকটা দানা বের করে স্বীয় দাত দিয়ে ভেঙ্গে হযরত খাজা বাবাকে খেতে দিলেন। তিনি দানা কয়টি খেয়ে নিলেন। খাওয়ার পরপরই তাঁর অন্তর্দৃষ্টি খুলে গেল এবং দুনিয়ার প্রতি বিতৃষ্ণা জেগে উঠলাে। এরপর তিনি তার সমস্ত সম্পত্তি খােদার রাস্তায় দান করে দিলেন এবং সত্যের সন্ধানে নিজের জন্মভূমি ত্যাগ করে বােখারায় চলে গেলেন। ( খাজা বাবার সম্পুর্ন জীবনী পড়তে এখানে ক্লিক করুন )

 

সে সময় বােখারা জ্ঞানার্জনের কেন্দ্র ছিল। সেখানে যেয়ে কিছুদিনের মধ্যেই তিনি সম্পূর্ণ কোরান শরীফ মুখস্ত করে ফেললেন। অর্থাৎ হাফেজে কোরানের মর্যাদা অর্জন করলেন। কিন্তু বেশীর ভাগ লেখকের মতে তিনি তাঁর গ্রামের মকতবে ৭ বছর বয়সেই সম্পূর্ণ কোরান শরীফ মুখস্ত করে হাফেজ হওয়ার সম্মান লাভ করেন। তারপর অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা সমাপ্ত করে আল্লাহ রাম্বুল আলামিনের পথের পথিকদের অনুসন্ধানে বের হলেন।

 

ইরাকের অন্তর্গত নিশাপুর তখন ধর্মীয় ও বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রাণকেন্দ্র ছিল এবং এই নিশাপুরের অদূরে হারূন নামক স্থানে তখন প্রখ্যাত কামেল বুজুর্গ হযরত খাজা ওসমান হারুনী কুন্দেসা ছিররুহুল বারী-এর খানকাহ শরীফ ছিল। হযরত খাজা বাবা এই কামেল বুজুর্গের নিকট বয়াত গ্রহণ করে ধন্য হলেন। মুরিদ হওয়ার পর ২০ বছর তিনি স্বীয় পীরের খেদমতে নিয়ােজিত ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি ১২ বার তার মুর্শেদের সাথে দেশ ভ্রমণ করেন। তখন পায়ে হেঁটে চলা ব্যতীত অন্য কোন ভ্রমণ উপযােগী বাহন ছিল না, যার জন্য সব ভ্রমণগুলােই তারা পায়ে হেঁটে সম্পন্ন করেছেন।

খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) জীবনী

প্রত্যেক ভ্রমণের সময়েই মুরশেদের প্রয়ােজনীয় মালপত্র স্বীয় মস্তকে বহন করে নিয়ে যেতেন। খেলাফতপ্রাপ্তি ও সাজ্জাদানশীন হওয়ার পর স্বীয় মুর্শেদ হতে বিদায় নিয়ে বাগদাদের আলিয়া মাদ্রাসায় উপস্থিত হলেন। পরে সরকারে দোজাহান হযরত রসূলে মকবুল (সাঃ)- এর নির্দেশে ৪০ জন সঙ্গীসহ হিন্দুস্থান অভিমুখে রওয়ানা হন। এ সময়ে হিন্দুস্থানে হিন্দুরাজাদের রাজত্ব এবং হিন্দু বসবাসকারীদের সংখ্যাই ছিল সবচে বেশি। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা ছিল নামমাত্র। হযরত খাজা হিন্দুস্থানে প্রবেশ করে প্রথমে লাহােরে দাতা গঞ্জেবস্ (রঃ)-এর মাজার শরীফে চল্লিশ দিন অবস্থান করেন। সেখান থেকে সরাসরি তিনি দিল্লিতে আগমন করেন এবং কিছুদিন অবস্থান করেন। ( খাজা বাবার সম্পুর্ন জীবনী পড়তে এখানে ক্লিক করুন )

 

এ সময় হতেই তিনি ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়ােগ করেন এবং হিন্দু ধর্মবিলম্বীদের প্রতি ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করে ইসলাম গ্রহণের অনুরােধ জানান। হিন্দুদের নিকট এ প্রস্তাব গ্রহণ করা দুঃসাধ্য হয়ে দেখা দেয়। তারা এ প্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিরােধ গড়ে তুলে এবং খাজা বুজুর্গের ক্ষতি সাধনে মনােনিবেশ করে। কিন্তু স্বয়ং আল্লাহ যার সহায় মানুষ তার কি করতে পারে? হিন্দুদের মধ্য হতে একজন শক্তিশালী যুবক হুজুরকে শহীদ করার জন্য মাহফিলে প্রবেশ করে। সংগে তার তীক্ষ্ণধার এক ছােরা লুকিয়ে রেখে সামনে এগিয়ে এসে সুযােগের অপেক্ষা করতে থাকে। হজুর তার মনােভাব বুঝতে পেরে সুধামিশ্রিত কণ্ঠে বললেন, “চুপচাপ আছ কেন? ছুড়ি বের করে নিজের কাজ সমাধান কর অযথা সময় নষ্ট করে লাভ কি?” এ কথা শােনার সাথে সাথেই সে ভীত হয়ে পড়ল এবং খাজা বাবার এ অলৌকিক ক্ষমতা দেখে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ল এবং নিজের কৃতকর্মের জন্য হজুরের পায়ে মাথা রেখে কাঁদতে লাগলাে। খাজা বুজুর্গ তাকে ক্ষমা করলেন। ( জালাল উদ্দিন রুমি (রহঃ) এর জীবনী )

 

তখন সে অত্যন্ত পবিত্র অন্তরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলাে। পরবর্তী সময়ে সে নিজেকে খাজা বাবার গােলামিতে আবদ্ধ করার সংকল্প ঘােষণা করলাে। এ সংবাদ অতি দ্রুত হিন্দু সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লাে। ফলে দলে দলে বিধর্মীরা এসে হজুরের নিকট ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে লাগলাে। (আল্হামদুলিল্লাহ)।

হিন্দুরাজাদের মধ্যে তখন পৃথ্বীরাজ ছিল খুব শক্তিশালী এবং তার রাজধানী ছিল আজমীরে। খাজা গরীব-উন-নওয়াজ তাই দিল্লি ছেড়ে আজমীর অভিমুখে রওয়ানা হলেন এবং যথাসময়ে আজমীর পেীছে প্রথমেই পৃথ্বীরাজকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য অনুরােধ জানালেন। কিন্তু এ সৌভাগ্য তার ললাটে ছিল না। তাই সে ঈমানও আনল না বরং পাল্টা আক্রমণ, নির্যাতন ও নানা প্রকার অসুবিধায় ফেলার জন্য যা যা করা দরকার তার কোন কিছুই বাকি রাখল না। প্রথম প্রথম ক্ষুদ্র শক্তি প্রয়ােগে কাজ না হওয়ায় পরে শাদী দৈত্যকে খাজা বাবার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলল এবং শাদী দৈত্য বিরাট বিরাট পাথর পাহাড়ের ওপর থেকে খাজা বাবার মজলিসের ওপর নিক্ষেপ করতে লাগলাে। কিন্তু খাজা বাবার ইশারায় পাথরগুলাে দূরে যেয়ে পড়তে লাগলাে। শাদী দৈত্য খাজা বাবার কোন ক্ষতি সাধনই করতে পারলাে না। এত বড় শক্তিশালী দৈত্যকে নিয়ােগ করেও যখন রাজা কোন সুবিধা করতে পারলাে না তখন হিন্দুস্থানের সর্বশ্রেষ্ঠ যাদুকর স্বীয় ভ্রাতা জয়পাল যােগীকে ডেকে পাঠালাে। ( জালাল উদ্দিন রুমি (রহঃ) এর জীবনী )

 

জয়পালের ছােট হতে বড় বড় সব যাদু যখন বিফল হলাে তখন সে তার সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ যাদু প্রয়ােগ করলাে কিন্তু তবু কোন কাজ হলাে না। জয়পাল অস্থির হয়ে উঠল এবং চিন্তা করতে লাগল এ লােক কোনু শক্তির অধিকারী, যার জন্য এ বিদেশীদের সামান্যতম ক্ষতিও সে করতে পারলাে না, তখন জয়পালের স্থির বিশ্বাস হলাে খাজা বুজুর্গ নিশ্চয়ই অলৌকিক-ঐশী শক্তির অধিকারী যা অন্য কোন ধর্মাবলম্বীদের পক্ষে অর্জন করা সম্ভব নয়। কেননা, সে জানতাে যে সারা ভারতবর্ষে এমন কোন শক্তিধর যােগী-তাপস নেই যে তার একটিমাত্র যাদুর মােকাবেলা করতে সক্ষম হবে। যার অগ্নিবাণ নিক্ষেপে পাথর পর্যন্ত স্কুলে যায়, অথচ এ কোন শক্তি বলে বলিয়ান যার কাছে সমস্ত যাদুই ধুলিস্যাৎ হয়ে গেলাে!

সমস্ত ব্যাপারটা উপলব্ধি করতে পেরে জয়পাল গরীবে নওয়াজের মজলিসে প্রবেশ করলাে এবং খাজা বাবার কদম মােবারকে মস্তক রেখে ইসলামের নিকট আত্মসমর্পণ করলাে । ইসলাম গ্রহণ করার পরে জয়পাল আবদুল্লাহ নাম গ্রহণ করে নিজেকে খাজা বুজুর্গের একজন প্রধান খাদেম হিসেবে নিয়ােজিত রাখার সৌভাগ্য অর্জন করলেন। জয়পালের যােগসাধনার পেছনে উদ্দেশ্য ছিল অমরত্ব লাভ করা। খাজা গরীব-উন-নওয়াজ তার মনের অভিপ্রায় জানতে পেরে রাবুল আলামিনের দরবার হতে তার এ প্রার্থনা মঞ্জুর করিয়ে আনলেন। তখন হতে তার মর্যাদা হলাে “খিজিরে বিয়াবান” (বন জঙ্গলের খিজির) এবং বিয়াবান শব্দটি নামের সাথে যুক্ত হয়ে নাম হলাে আবদুল্লাহ বিয়ানী। এরপর হতে তিনি আবদুল্লাহ বিয়ানী নামেই খ্যাত। ভারতের অন্তর্গত মধ্যপ্রদেশের কুরুপাণ্ডবে অবস্থিত একটা পাহাড়ী জঙ্গল (সেটা এখন আবদুল্লাহ বিয়ানের জঙ্গল নামে পরিচিত), সেখানে তার আস্তানাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর ফারুনে বিরাট মেলা বসে এবং প্রথম বৃহস্পতিবার ফাতেহা হয়। পৃথ্বীরাজের সমস্ত লােকজন ঈমান আনলেও পৃথ্বীরাজ কিন্তু ঈমান আনল না। অবশেষে খাজা বুজুর্গ দুঃখিত হয়ে পৃথ্বীরাজকে লিখে পাঠালেন, “মা তুরা জিন্দাহ মুসলমানানে সপরদেম।” অর্থ-আমরা জীবিত বন্দী অবস্থায় তােমাকে মুসলমানদের হাতে অর্পণ করলাম।” ( মারেফত কি এবং মারেফত কাকে বলে )

এ চিঠি দেয়ার পরপরই সুলতান শাহাবুদ্দীন মােহাম্মদ ঘােরীর সাথে পৃথ্বীরাজের যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং যুদ্ধে পৃথ্বীরাজ জীবিত বন্দী হয়। পরে তাকে হত্যা করা হয়। খাজা বাবা জীবনের চল্লিশটি বছর হিন্দুস্থানের মাটিতে স্রষ্টার সৃষ্টিকে সঠিক পথে নিয়ােজিত করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। লক্ষ লক্ষ বিধর্মী নরনারী স্বেচ্ছাপ্রণােদিত হয়ে ইসলামের মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে হযরত খাজা বুজুর্গকে পাওয়ার আশায় তার হাতে হাত রেখে ইসলামের প্রতি ঈমান এনে মুসলমান হয়েছে এবং হযরত খাজা বাবার গােলামি লাভ করে গৌরবান্বিত হয়েছে। ৬৩৩ হিজরীর ৬ই রজব রােববার দারুল খায়ের, আজমীর শরীফে হযরত খাজা বুজুর্গ ইহলােক বর্জন করেন (তাঁর বেসাল শরীফ অর্থাৎ মহামহিমের সাথে মহামিলন ঘটে)। রুহ মােবারক দেহত্যাগ করার পর তার পেশানী মােবারকে (ললাটে) নূরের অক্ষরে লেখা ছিল “মাতা হাবীবুললাহ ফি হুব্বিল্লাহু” অর্থাৎ খােদার প্রেমে খােদার বন্ধু বিদায় নিল। ( খাজা বাবার সম্পুর্ন জীবনী বানী এবং উপদেশাবলী পড়তে এখানে ক্লিক করুন )

 

রওজা মােবারক আজমীর শরীফের দারুলখায়েরে জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকল দর্শনপ্রার্থীদের জন্য আজও উন্মুক্ত রয়েছে। আল হামদুলিল্লাহ আলা জালেক।

ম্যায় গােলাম। খাজাকা তলব কি রাহুমে হাম জিত্ কা সার্মা সমঝতে হ্যায়। দ্বারে খাজা কো বাবে মনজিলে ইরফান সমঝুতে হায় খােদাওন্দে জাহাঁ কে লুছে খাজা ইয়ে দিওয়ানে তােমহারে নাম কো ভি ম্যায় ইমা সমঝতে হয়। নিগাহোঁ মে তােমহারি হায় হাদীসে মুস্তফা খাজা তােমহারি গােতােগা কো শারহে কোৱা সমঝুতে হ্যায় হামে খাজা হে উলফাত হায়, গােলামে সনজরী হাম হ্যায় হর এক মুশকিল কো আপনি জিত মে আসা সমতে হায়। ইয়ে মানা, আয়ে মুঈনুদ্দীন! তুমছে দূর হ্যায়, লেকিন তােমহে হর ওয়াক্ত আপনে দিল মে হাম মেহম সমতে হ্যায় ।

 

– মনসুর আজমেরী

আমি খাজার গােলাম। অনুসন্ধানের পথকে আমি জীবন উপকরণ মনে ক। খাজার দরবারকে পরিচয়ের ঠিকানা মনে করি। খােদার জগতে প্রেমে, খাজা আমি দিওয়ানা। তােমার নামকেও ঈমানের মূল মনে করি। তােমার দৃষ্টিতে আছে মােস্তফার হাদীস, হে খাজা, তােমার প্রবচনকে কোরানের সারমর্ম মনে করি। প্রেমিক আমি খাজার গােলাম সনজরীর দুঃখকষ্ট প্রতিটিকে, তােমার স্মরণে সহজ মনে করি। মানি, আছি আমি তােমা হতে বহু দুরে হে মুঈনুদ্দীন, কিন্তু মেহমান তুমি মাের অন্তরে সতত।

 

খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) এর সম্পূর্ণ জীবনী পড়তে এখানে ক্লিক করুন।